করোনাভাইরাস বর্তমান বিশ্বের অন্যতম আতঙ্কের নাম। এরই মধ্যে বাংলাদেশেও এটি মহামারি আকারে ছড়িয়েছে। কোভিড-১৯ নামক রোগ সৃষ্টকারী এই ভাইরাসটি মূলত নাক, মুখ ও চোখ হয়ে আমাদের শ্বাসনালীতে ও ফুসফুসে প্রবেশ করে। করোনার হাত থেকে বাঁচতে হলে তাই নাক মুখ ও চোখের যত্নের বিষয়ে বিশেষভাবে জানা প্রয়োজন।
এজন্য কিছু স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা জরুরি। কভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে সবার আগে যেটি করতে হবে তা হলো- ২০ সেকেন্ড বা তার অধিক সময় ধরে নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। এক্ষেত্রে হাতের সামনের ও পেছন ভাগ, আঙুলগুলোর মধ্যে ও নখের নিচের অংশ ভালোভাবে সাবান বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে ঘষে প্রবাহমান পানি দিয়ে পুরো হাত ভালোভাবে কচলে ধুয়ে নিতে হবে। হাত ধোয়ার পর তা শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে নিতে হবে। নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত ধোয়া যেকোনো সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা দেয়।
এছাড়া নাক মুখ ও চোখ হাত দিয়ে স্পর্শ করা যাবে না। এভাবে সংক্রমণের ঝুঁকি অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব। জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে। বাজার, হাসপাতাল, পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বা যে কোনো ধরনের গণজমায়েত এড়িয়ে চললে সংক্রমণের ঝুঁকি কমে।
জরুরি প্রয়োজনে ঘরের বাইরে গেলে অবশ্যই ভালো মানের মাস্ক, গ্লাভস এবং চোখের সুরক্ষার জন্য গগলস ব্যবহার করতে হবে। বাইরে থেকে এসে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিতে হবে, কাপড়গুলো ডিটারজেন্ট পানিতে ভিজিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে এবং সাবান দিয়ে ভালোভাবে গোসল করে নিতে হবে।
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। ভিটামিন সি এবং ভিটামিন এ যুক্ত খাবার বেশি করে খেতে হবে। এছাড়া কালোজিরা, মধু, আদাযুক্ত চা ফ্লু জাতীয় রোগ থেকে শরীরকে সুরক্ষা দেয়।
করোনাভাইরাস মহামারির এই কালে সর্দি-কাশি-গলাব্যথা হলেই আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। ঋতু পরিবর্তনের সময় ফ্লু জাতীয় সর্দিকাশি, জ্বর, গলাব্যথা আমাদের দেশে একটি সাধারন সমস্যা। ফ্লু জাতীয় সমস্যা হলেই সেটা করোনা নয়। তবে সাবধান থাকতে হবে। এ ধরনের সমস্যার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় মেনে চলা উচিত-
# পরিবারের অন্য সদস্যদের থেকে আলাদা থাকতে হবে।
# প্রতিদিন প্রচুর পানি পান করতে হবে।
# কুসুম গরম লবন পানি দিয়ে দিনে অন্তত ৩/৪ বার গার্গল করতে হবে।
# নিয়মিত আদাযুক্ত গরম চা পান করতে পারে।
# ভিটামিন সিযুক্ত খাবার বেশি করে খেতে হবে।
# ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্যারাসিটামল বা এন্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ খাওয়া যেতে পারে।
এছাড়া ৩/৪ দিনে শারীরিক উন্নতি না হলে টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। প্রয়োজনে নিকটস্থ হাসপাতালের ফ্লু কর্নারে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী করোনা ভাইরাস সংক্রমণের পরীক্ষা করাতে হবে।
লেখক: এমবিবিএস, এফসিপিএস (ইএনটি), নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ, শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বরিশাল